সারা বিশ্বে অতিমারি করোনা সংক্রমণ ঘটেছে। লকডাউন, গৃহবন্দী,অফিস বন্ধ, কোথাও বসে মিটিং করার উপায় নেই।
এঅবস্থায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে সর্বত্র যোগাযোগ। ব্যক্তিগত আর অফিসিয়াল সবকিছুই চলছে অনলাইনে। খাদ্য ক্রয়, সভা করা ও দেখা সাক্ষাত সবকিছু অডিও ও ভিডিও কলে সেরে নিচ্ছে মানুষ। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাশ,হোমওয়ার্ক জমা দেয়া এবং পরীক্ষা দিচ্ছে স্ব স্ব বাড়িতে বসে।উন্নত রাষ্ট্রসমূহে সবধরনের ক্রয় কাজ সারছে ইকমার্স সাইট দিয়ে।
সেই ইন্টারনেট যদি আপনার ফোনে স্লো হয় , তাহলে মেজাজ হট না হয়ে উপায় কি?ইন্টারনেট স্পিড স্লো থাকলে এসব কাজ মোটেই করা সম্ভব না। বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই।
আপনি যদি এ ধরণের সমস্যায় পড়েন তবে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করুন। দেখবেন ফোন ব্যবহারের কতই না আনন্দ পাচ্ছেন। থাকবে না কোন মনোকষ্ট।
মোবাইলে ইন্টারনেট স্পিড বাড়াবেন যেভাবে
নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন আর ব্যাস মনের সুখে প্রয়োজনীয় স্পিডে নেট দিয়ে কাজ চালিয়ে যান।
দুর্বল নেট : বাংলাদেশের ইন্টারনেট কোম্পানীগুলো কতরকমের অফার যে দেয় গ্রাহকদের তার কোন শেষ নেই। তবে মনে রাখবেন তারা ফ্রি বলতে কিছুই দেয় না। নানা প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে। যেমন: তিন জিবি২৪ ঘন্টার কিনলে ২জিবি ফ্রি( ৩জি (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা)।
ওয়াইফাই : এর শেয়ারিং নেট অনেক সময় স্লো হয়। একসাথে ২০/৩০জন সিনেমা দেখলে বা ইউটিউব চালালে এমন দশা হয়। বিশেষত: সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত।
অফিসিয়াল কাজের জন্য হলে ডেডিকেটেড লাইন ৫-১০এমবিপিএস বা সিঙ্গেল আইপি’র ওয়াইফাই লাইন ব্যবহার করা উচিত। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম এখন অনেক কম। প্রতি এমবিপিএস এর জন্য মাসিক ভাড়া ৫০০টাকা নিধারণ করে দিয়েছে বিটিআরসি।
মোবাইল ফোনের ক্যাচে পরিষ্কার করুন:
ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর মোবাইলে থাকা ক্যাচে (Cache) ফাইল গুলিকে ক্লিয়ার বা ডিলিট করুন। কারণ, মোবাইলে যদি অত্যাধিক ক্যাচে ফোল্ডার জমে যায়, তবে তা ফোনের কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করবে।ফোনের অপারেশন স্লো করে দেয়।
বেশি জনসমাগম এলাকায় যেমন শীতকালে কক্সবাজার বিচ এলাকায় নেটতো স্লো হবেই তার ওপর মোবাইলে লাইন পাওয়া অনেক কঠিন।কারণ একসাথে হাজার হাজার মানুষ একটি টাওয়ার দিয়ে কল করার বা নেট চালাবার চেষ্টা করে থাকে।
এ সময় ওয়াইফাই রিসেট করতে পারেন। সাবধান আগে পাসওয়ার্ড নোট করে রাখবেন।
মোবাইল ব্রাউজারের ক্যাচে পরিষ্কার করুন:
মোবাইল ব্রাউজার যেমন অপেরা মিনি,ফায়ারফক্স, গুগল ক্রম এর মধ্যে জমে থাকা ক্যাচে পরিষ্কার করুন। এগুলো আপনার ফোনের নেট স্পিড স্লো করে রাখবে। সবকিছু স্লো করে। ছবি আসতে, ওয়েবসাইট খুলতে দেরি করবে। মোবাইল ব্রাউজারের ক্যাচে পরিষ্কার করতে আপনি এনড্রয়েট অ্যাসিসটেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
এপিএন সেটিংস নতুনভাবে করুন :
এপিএন বা Access Point Network -এর সেটিংস ঠিক আছে কিনা তা দেখুন। কারণ, এটির সেটিংস যদি ভুল থাকে তবে তার প্রভাবে ইন্টারনেট স্পিড দুর্বল হবে। ম্যানুয়ালিও এপিএন -এর সেটিংসকে ঠিক করা যায়। এছাড়া কাস্টমার কেয়ারে কল করেও সঠিক এপিএন সেটিং সংগ্রহ করতে পারেন।
সিম-১ স্লট: সব সময় নেটের বেশি স্পিড পাববার জন্য সিম-১ স্লট ব্যবহার করবেন।এই স্লটটি ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য উপযোগি করে বানানো।
ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলি বন্ধ করুন :
ফেসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলি সর্বাধিক ডেটা ব্যবহার করে। ফলে এগুলি ফোনের ইন্টারনেট স্পিড কমিয়ে দেয়। তাই, আপনি আপনার মোবাইলের সেটিংস থেকে অ্যাপ সেটিংসে গিয়ে, অটো-প্লে এবং অটো-ডাউনলোড অপশন দুটিকে ডিজাবেল বা অফ করে দিন। এরপর, ব্রাউজারে গিয়ে, ডেটা সেভ মোড এনাবেল বা অন করে দিন।
খুঁজে বের করুন কোন কোন অ্যাপস বেশি ডাটা খাচ্ছে :
আমরা সব সময় সব অ্যাপস ব্যবহার করি না। যেমন : শেয়ার ইট, টিকটক, ইমো, ডুয়ো। খুব জরুরি বা অলস সময় হাতে না থাকলে এ সব ব্যবহার করি না। কিন্ত এসব ব্যবহার না করলেও এদের জন্য প্রচুর নেট খরচ হয়। এরা ডাটা খরচ করে অটোমেটিক। দখল করে রাখে স্টোরেজ স্পেস।
আপনি যখন ডাটা অন করে রাখবেন তখন এসব অ্যাপস এর অটো রান বন্ধ করে দেবেন।যাতে অটোআপডেট না হয় এবং অটো ভিডিও না চলে। প্রয়োজনে জেনে নেবেন কিভাবে ডিসঅ্যাবল করতে হয় ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস।
অটো-আপডেট অপশন বন্ধ করে দিন :
অটো-আপডেট অপশন এনাবেল বা অন থাকলেও কিন্তু ইন্টারনেট স্পিড কমে যেতে পারে। কেননা, ইন্টারনেট চালু করলেই গুগল-প্লে অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট ডাউনলোড করতে শুরু করে দেয়। ফলে ডাউনলোডের জন্য অনেকটা ডেটা খরচ হয়ে যাওয়ার দরুন ইন্টারনেট স্পিড কমে যায়। তাই হাই-স্পিড ইন্টারনেট পেতে অটো-আপডেট মোডটিকে বন্ধ করে রাখুন।
নেট স্পিড বাড়ানোর কাজ করার সময় ফোন এয়ার প্লেন মোডে রাখুন :
পরে কাজ শেষে পুনরায় বাটনটি ইনঅ্যাক্টিভ করে কাজ করুন। একএকেকটি এনড্রয়েট ফোনে এই কাজটি একেক রকম। দেখে নেবেন কিভাবে করতে হয়।
মোবাইল নেটওয়ার্ক অপশন বদলে দিন :
মোবাইল ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানোর জন্য আপনি নেটওয়ার্ক অপশন বদলাতে পারেন। এরজন্য ডিভাইস সেটিংস -এ চলে যান। সেখানে, ‘Network Settings’ নামক একটি বিকল্প দেখতে পারবেন। সেটিতে ট্যাপ করুন। এরপর, ‘preferred type of network’ লেখা বিকল্পটিতে ট্যাপ করুন। এবার সেখানে থাকা 4G/LTE অপশনটি বেছে নিন।
ফোন রিস্টার্ট করুন :
অনেক সময় ফোন রিস্টার্ট করলেই ফোন হ্যাং হওয়া ও স্পিড হ্রাস পাওয়া সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। শর্টকাট পথে ফোনের স্পিড বৃদ্ধি করার এটি একটি কার্যকর কৌশল।
ফোনে একটি এড ব্লকার চালু করুন:
গুগল প্লে স্টোরে অনেকগুলো এড ব্লকার অ্যাপস পাবেন। আপনি যখন কোন সাইটে ভিজিট করেন তখন বার বার এড মুছতে বা কাটতে হবে না যদি এড ব্লকার চালু রাখেন।
এড ব্লকার অবশ্যই আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় দারুন আনন্দ দেবে।
দ্রুত লোড হবে ওয়েবসাইট । ভিডিও দেখতে পাবেন খুব স্বাছন্দে।
এভাস্ট সিকিউর ব্রাউজার কিন্ত একটি ভাল এড ব্লকার। এটি একেবারে ফ্রি এবং সহজে ইনস্টল করে কাজ চালাতে পারেন।
ডাটা স্পিড বুস্টার:
এটি একটি বিতর্কিত অ্যাপস। কেউ কেউ এটিকে খুব ভাল বলেন, অনেকে আবার ফালতু হিসেবে আখ্যা দেন। উপরের পদ্ধতিগুলোর কোনটি আপনার ডিবাইসে কাজ না দেয় সে ক্ষেত্রে আপনি ডাটা স্পিড বুস্টার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। বাড়তে পারে ইন্টারনেট স্পিড।
এভাস্ট মোবাইল সিকিউরিটি এনড্রয়েট এবং আইওএস উভয় প্রকারের ডিভাইসকে ভাইরাস ও হুমকি থেকে রক্ষা করবে।
ফোন সফটওয়ার আপডেট রাখুন:
আপনি এড্রয়েট বা আইফোন যেটিই ব্যবহার করুন না কেন সব সময় ফোনের মূল সফটওয়ারগুলো আপডেট রাখার চেষ্টা করবেন। তাতে ইন্টারনেট স্পিড ঠিক থাকবে বৈ কমবে না।
ফোনের ব্যাকআপ রাখুন :
আপনার ডিভাইসকে রিসেট করার আগে ফোনের ব্যাকআপ রাখুন। তারপর ফ্যাক্টরি সেটিংস এ যান। সর্বশেষ সবডাটা ফেরত পাবেন।
উপরের কাজগুলো করলে দেখবেন এবার আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড বহুঅংশে বেড়ে যাবে।