ফেসবুকে পরিচয়, প্রথম সাক্ষাৎ : করণীয় ও বর্জনীয়

1

কিছুদিন ধরে ফেসবুক মেসেনজারে অপরিচিত কারে সাথে চ্যাট করছেন। এভাবে ফেসবুকে পরিচয় আপনাদের । এরমধ্যে কেটে গেল মাসখানেক সময়। আপনার ফেসবুক বন্ধু সশরীরে সাক্ষাৎ চান। এমন অনুনয় বিনয় করে বলছে যে, দেখা আপনাকে করতেই হবে। আপনিও মনে মনে সাক্ষাত করতে চান। ভাববিনিময় হবে। কেমন মানুষটি উভয়ে জানবেন। কিন্ত বন্ধুটির মনের ভেতর কি আছে আপনি জানেন না।
সাক্ষাতের আগে আপনার নিরাপত্তা আপনাকেই ভাবতে হবে। আপনিই ভাল সিদ্ধ|ন্ত নিতে পারবেন কি ভাবে কি করলে। আপনি সর্বদা নিরাপদে থাকবেন কিভাবে সেটা আপনার নিজস্ব ভাবনার ওপর নির্ভর করে।
আপনার ব্যক্তিগত ,পারিবারিক, সামাজিক ও বন্ধুবান্ধবদের নেটওয়ার্ক ও ক্যাপাসিটি বুঝে কাজ করবেন। নিজেদের এলাকার বাইরে প্রথম সাক্ষাতে যাওয়া উচিত না।

ফেসবুক

নায়ক বা নায়িকা হবার আশায় অপিরিচিতি কোন ভিডিওগ্রাফার , ক্যামেরাম্যান,ইউটিউবার বা টিকটকারের হাত ধরে অজানা পথে বেরিয়ে গেলে খেসারত আপনাকে দিতে হবে। সর্বস্ব হারিয়ে নায়ক হবার স্বপ্ন পথে মারা যেতে পারে! সম্ভ্রম হারিয়ে রাতারাতি খ্যাতিমান নায়িকা হবার ইচ্ছা ঘৃণায় পরিণত হওয়া সময়ের ব্যাপার।
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, কাটইউরকোট একরডিং ইউর ক্লথ। বাংলায় বলা হয়, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নাও।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত একটি নিবন্ধে স্পষ্ট বলেছে,আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনিই সেরা বিচারক। কোন গাইড লাইন এটির বিকল্প হতে পারে না।

ফেসবুকে পরিচয় প্রথম পর্ব

 

সেশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে পরিচিত কারে সঙ্গে প্রথম সাক্ষাত করতে গেলে আপনার যা যা করা উচিত এবং যা যা করা উচিত না সে সম্পর্কে ফেসবুক ‘When meeting someone from Facebook on Person’ শীর্ষক নিবন্ধে কিছু গাইড লাইন বা পরামর্শ দিয়েছে।

০১)দেখা এবং অবস্থান করুন-পাবলিক বা উম্মুক্ত স্থানে: সাক্ষাতের স্থান একটি জনবহুল এলাকায় (যেমন চায়ের দোকান, ফাস্ট ফুডশপ,কপি শপ,শপিং মল,পার্ক) হতে হবে।

০২) সাক্ষাত ও অবস্থান করার পরিকল্পিত স্থানটি আগেভাগে ঘুরে আসুন।যদি জায়গাটি একদম অপরিচিত হয়ে থাকে তাহলে আশপাশের পরিবেশ ও মানুষ সম্পর্কে আইডিয়া নিয়ে রাখুন।প্রথম সাক্ষাতের দিন এদিক সেদিক তাকাতে হবে না।

০৩)ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না: করো সাথে ফেসবুক মেসেনজারে যোগাযোগের সময় ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।ফোন নাম্বার,বাসা ও অফিসের ঠিকানা, পিতা মাতার তথ্য, ব্যবসায়িক তথ্য ইত্যাদি। যার সাথে শেয়ার করলেন সে যদি অসৎ হয়, সে কিন্ত ঠিকানা পেয়েই আপনার বাসায় হাজির হয়ে যাবে।হয়তো দেখাবে –‘এ দিকটাই এসেছিলাম, ভাবলম একবার ঢু মেরে যাই আপনার বাসায়’।

০৪)যাওয়া আসার জন্য নিজেই গাড়ি ঠিক করে রাখুন :

আগন্তকের সাথে সাক্ষাত করতে যাওয়া এবং ঠিকভাবে ফিরতে, যাওয়া-আসার জন্য পূর্ব থেকে নির্ধারিত গাড়ি ব্যবহার করুন। ফেসবুক বন্ধুর গাড়িতে উঠবেন না। প্রথম দেখাই যাতে সব ভালভাসা উজাড় করে দেবেন না এবং না নেন তা খেয়াল রাখতে হবে।

নতুন ফেসবুক বন্ধু। প্রথম সাক্ষাত।কত মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনবেন।নানা প্রশংসা। পাম্পে ফুলে আকাশে উঠে যাবেন না। মনে রাখবেন, মিষ্টি কথায় চিড়া ভিজে না। তার কথার পেছনের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করুন।

০৫)পরিকল্পনা সম্পর্কে কাউকে অবহিত করুন:

নতুন ফেসবুক বন্ধুর সাথে দেখা করতে কোথায় যাচ্ছেন তা একজন বন্ধু বা পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্যকে জানিয়ে রাখুন।যাওয়া ও ফিরে আসার পথে কি পরিবহন ব্যবহার করবেন তাও জানাতে ভুলবেন না। সম্ভব হলে পরিবারের একজন সমমনা ও প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যকে সাথে নিয়ে যেতে পারেন। অথবা একাধিক বন্ধু বান্ধবিকে একই সময়ে একই স্থানে আশেপাশে থেকে গোপনে আপনার ওপর নজরদারী করার জন্য নিযুক্ত করতে পারেন।তাতে আপনি অনেক নিরাপদ বোধ করবেন।

০৬) ফোন সাথে নিতে ভুলবেন না :

নতুন চেহরার অপরিচিত ফেসবুক বন্ধুকে জনবহুল এলাকা বা রেষ্টুরেন্টে খুঁজে পেতে যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য মোবাইল ফোন সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। কল করার জন্য নয়, মেসেনজারে যোগাযোগের জন্য। এটা নিশ্চিত রাখুন যে,ফোনটির ব্যাটারি শতভাগ চার্জ করা। এন্ড্রয়েট সেট নিয়ে গেলে লোকেশান চালু রাখুন।
০৭) ফেসবুক বন্ধুকে প্রথম সাক্ষাতে এমন প্রশ্ন করবেন না যাতে তিনি বা সে বিব্রত হতে পারে:

যেমন-
-আপনার বা মা কি করেন? তদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন
-কি কারণে আপনার তালাক হয়েছিল
-লেখাপড়া বেশি কেন করতে পারেন নি
-তোমার চাকরিটা ভাল না,কেমনে কর?
-ঢাকার বাড়িটি কি নিজেদের না ভাড়া?
প্রথম সাক্ষাতে মানুষ এ সব প্রশ্নে ক্ষুব্ধ হতে পারে। এ সব কঠিণ বিষয়। সহজে বলতে চায় না। একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। মনে রাখবেন, বন্ধুত্ব টিকে থাকলে ধীরে ধীরে আপনা আপনি তিনি নিজেই বলবেন সবকিছু।

০৮) প্রথম সাক্ষাত মানে প্রথম দিনেই সব প্রশ্ন করতে হবে, সবকিছু জানতে হবে এমন নয়:

প্রথমদিনে প্রেমের বা বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবেন না। এমন কি ব্যবসা বা চাকরির প্রস্তাবও দেবেন না। টাকা পয়সা লেনদেনের বা এই বন্ধুর বাসায় যাবার অঙ্গিকারও করবেন না।নিজেকে বন্ধুর সামনে হতাশা মনোভাব বা বড়লোক বড়লোক ভাব দেখাবেন না। সবকিছুতেই সময় নিন। সবুরে মেওয়া ফলে।

০৯) ঘটনাস্থলে আপনি যদি নিজেকে বিপদগ্রস্থ মনে করেন:

সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক বন্ধু’র সাথে সাক্ষাতকালে যদি আপনি মনে করেন, বিপদে পড়েছেন, পরতে যাচ্ছেন, একটু আড়াল থেকে ৯৯৯ এ কল করে নিকটস্থ থানার সাহায্য নিতে পারেন।
-বন্ধুর আচরণ, দেখা করার উদ্দেশ্য যদি খারাপ হয়, আপনি দ্রুত বৈঠক ত্যাগ করে নিজের পরিবহনেই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।
-যে কাউকে আপনি ব্লক করে দিতে পারেন।যাতে বিরক্ত করতে না পারে।তাদের পোস্টও হাইড করতে পারেন। ফেসবুক সে অধিকার আপনাকে দিয়েছে।

১০) ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড :
ফেসবুককে যে কোন কিছুই জানাতে পারেন যদি সেটি ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড হয়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দেয়া সেবার অপব্যবহার যাতে না হয়, সেটা তারা কড়াভাবে নেয়। ফেসবুকে কি করা যাবে এবং কি কি করা যাবে না এ সব বিসয়ে কিছু নিয়ম চালু আছে। যা ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড রুলস নামে পরিচিতি।
ফেসবুক সবার বিশ্বাস ও মতামতকে মূল্য দেয়। কেউ কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করবে সে সুযোগ ফেসবুক কাউকে দেয় না। ফেসবুক চায় যে কোন সমস্যা নিয়ে উভয়পক্ষ খোলামেলা কথা বলুক।যদিও তাতে অনেকের আপত্তি থাকে।

বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভরতা, গোপনীয়তা রক্ষা 

ফেসবুক এ মানুষ যা দেখে তার ওপর বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভরতা বাড়াতে বা নিশ্চিত করতে চায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

ফেসবুক কে নিরাপদ স্থান হিসেবে রাখতে কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।ফেসবুক ব্যবহার করে কাউকে হুমকি দেয়া, কাউকে ফেসবুক ব্যবহারে বাধাগ্রস্থ করা ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ সমর্থন করে না।

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ও গোপনীয়তা রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। এটা তাদের প্রাইভেসি পলিসিভুক্ত। এ কারণে মানুষ সহজে এবং স্বতস্ফুর্তভাবে মতামত শেয়ার করতে পারে।
ফেসবুকের কাছে সব মানুষ সমান। সবার সমান অধিকার।কেউ কাউকে অপমানিত করবে তা ফেসবুক আশা করে না।

মূলত: এটিই হল ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড রুলস।

ফেসবুকে পরিচয়, প্রথম সাক্ষাতে অপহরণ,ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের অনেক ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে।সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ও নিউজ পোর্টাল এর খবরে মাঝে মাঝে এমন সংবাদের শিরোনাম চোখে পড়ে। এসব পড়লে বুঝতে পারবেন অপরিচিত ব্যক্তির সাথে প্রথম সাক্ষাতে কী রকম সম্ভাব্য বিপদ হতে পারে।

কিছু সংবাদের হেডলাইন রেফারেন্স হিসেবে দেয়া হল:

ফেসবুকে পরিচয়, চ্যাট, প্রেম। ৩মাস পর বিয়ে করে ভদ্রলোক অবাক হলেন, তার স্ত্রীর আগের বিয়ের সংখ্যা জেনে!
প্রেমের ফাঁদে স্কুল ছাত্রীকে ভারতে পাচার,
বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ,
প্রেমিকার অশ্লীল ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায়,
ব্যবসার প্রস্তাব দিয়ে ফ্লাটে ডেকে নিয়ে বিবস্ত্র করে, নগ্ননারীর সাথে ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায়।

প্রিয় পাঠক, ইতিবাচক নেতিবাচক ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি এখানে। উদ্দেশ্য একটাই ফেসবুকে পরিচয় থেকে কেউ যেন প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। মনে রাখবেন সেফটি ফাস্ট।নিজের নিরাপত্তাকে সবসময় অগ্রাধিকার দেবেন। অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন।

আশাকরি ভাল লাগলে প্রবন্ধটি শেয়ার করবেন যেন অন্যরাও উপকৃত হন।

1 Comment
  1. SAJIA ALAM says

    ৫৬৬৬৬

Leave A Reply