ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মে কোন কিছু লেখা প্রদর্শন(কন্টেন্ট) কে সংক্ষেপে বলা হয় ওটিটি।অনলাইনের নানা ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া,ব্লগ,নিউজ পোর্টাল,সাধারণ পোর্টাল, ওয়েবসাইটে নিজের মতামত,পরামর্শ,প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা এখন খুব সহজ।সে কারণে ব্লগ,ব্লগিং, ব্লগার শব্দগুলো একই সূতায় গাথা। ব্লগ লিখে আয় করতে চাইলে এ বিষয়ে ভালভাবে স্টাডি করতে হবে।
ব্লগ কি, ব্লগিং কি, ব্লগার কাকে বলে? ব্লগ সাইট কি
একটি বা একাধিক বিষয়ে কোন একটি ওয়েবসাইট বা পোর্টালে নিয়মিত নানাবিধ তথ্য, কথাবার্তা,পরামর্শ,সুপারিশ,কোন জিনিসের ভাল মন্দ দিক তুলে ধরা হয়, কিংবা নিজের অভিমত ধারাবাহিকভাবে লেখনির মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়, এই ওয়েবসাইট বা ওয়েবপোর্টালকে সাধারণত ব্লগ বলা হয়ে থাকে। আজকাল কেবল লেখা প্রদর্শনের মধ্যে ব্লগ সীমাবদ্ধ নেই, ছবি বা ইমেজ,আর্ট, ভিডিও,অডিও বার্তাও ব্লগের মূল বিষয় হয়ে উঠেছে।রাজনীতি, অর্থনীতি, টেক, মোবাইল ফোন, পোর্ট শিপিং, পরিবহন,ধর্ম এর মত ছোট বিষয়েও হাজার হাজার ব্লগ তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। এ সব ব্লগ সাইটে যারা কাজ করেন তাদের বলা হয় ব্লগার। যে কাজ তারা করেন তাকে বলা হয় ব্লগিং।সারাবিশ্বে পেশা হিসেবে বর্তমানে ব্লগিং অনেক জনপ্রিয়।ব্লগার বা কনটেন্ট লেখকরা হলেন ব্লগের প্রাণ।ওয়েবসাইটে বা ব্লগে কোন কনটেন্ট বা লেখা না থাকলে সেই সাইটের কোন মূল্য নেই। তাই বলা হয়ে থাকে কন্টেন্ট ইজ কিং।
ব্লগিং শিখুন :
সাম্প্রতিক প্রয়োজনীয় বিষয়ে ভালমানের নিয়মিত লেখা(পোস্ট) না থাকলে কোন ব্লগ বা ওয়েবসাইট পাঠকপ্রিয়তা পায় না বা জনপ্রিয় হয় না। প্রথমে ব্লগিং শিখুন তারপর ব্লগ তৈরি করে ব্লগ যথাযথ লেখার নিয়ম অনুসরণ করলে ব্লগ মনেটাইজ করে অনলাইনে ইনকাম বা টাকা আয় করা সহজ।সে জন্য প্রয়োজন প্রচুর ধৈর্য্য, পর্যাপ্ত লেখাপড়া করা ও ব্লগের জন্য লেখা বা পোস্ট তৈরি করা। যেনতেন ব্লগিং করে ব্লগার(তথাকথিত) হওয়া যাবে, ব্লগিংকে আয় রোজগারের পেশা হিসেবে নিতে গেলে ভালমানের ব্লগ তৈরি করতে হলে ৭দিন থেকে কমপক্ষে ৭সপ্তাহ চরম ধৈর্য্য নিয়ে একটানা এক বিষয় নিয়ে কাজ করে ব্লগিং শিখুন। ইনশআল্লাহ আলোর মুখ দেখবেন।
ব্লগ মনেটাইজ, অনলাইন ইনকাম, সেরা ব্লগ
ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করতে চাই-ব্লগ তৈরি, ব্লগ সাইটের নাম নির্বাচন, বিষয় বা নিস নির্বাচন, ব্লগ লেখার নিয়ম ও ব্লগকে মনেটাইজ করা, এবং ব্লগ থেকে টাকা আয় করা’ বিষয় নিয়ে। সবোর্পরি ব্লগ,ব্লগিং, ব্লগার এবং অনলাইন ইনকাম। জনপ্রিয় এবং আর্থিকভাবে লাভজনক তেমন ব্লগকে সফল বলা হয়।এমন ব্লগের মালিককে সফল ব্লগার আখ্যা দেয়া হয়।
ব্লগসাইট বা ব্লগ তৈরি:
২ভাবে ব্লগ বানানো যায় ক) বিনা খরচে খ) টাকা বিনিয়োগ করে
ক) বিনা খরচে ব্লগ বানালে সেটি তেমন লাভজনক হয় না, ব্লগারও শেষ পর্যন্ত সেখান হতে মন পরিবর্তন করে নেন।লেখালেখি বন্ধ করে দেন। শুধু একহাজার টাকায় ডোমেইন কিনে ফ্রি হোস্টিং ও থিম ব্যবহার করেও ব্লগ বানাতে পারেন।সে ক্ষেত্রে কাজ শুরু করতে কাজ জানা মানুষের পেছনে ছুটতে হবে।
পড়ুন : ফ্রি ব্লগ বানাবেন যেভাবে..ফ্রি ব্লগ বানাতে ১০টি সেরা ব্লগিং সাইট
ব্লগ সাইটের নাম:
খ) তাই আপনাকে টাকা দিয়ে ভাল কোম্পানীর কাছ থেকে নিজের পছন্দমত ডোমেইন নাম(ওয়েবসাইট নাম+হোস্টিং(সার্ভার স্পেস+থিম) কিনে একটি ব্লগ বানানোর পরামর্শ দিচ্ছি। প্রথম বছর মাত্র ২০০০ টাকা খরচে আপনি মোটামুটি সুন্দর মানের ব্লগ বানাতে পারেন।দ্বিতীয় বছর থেকে এ খরচ কমে আসবে। শুধুমাত্র মাত্র ১৫০০টাকায় ব্লগ সাইটের নাম (ডোমেইন+হোস্টিং) রিনিউ করে কাজ চারিয়ে যেতে পারবেন। প্রথম বছরের কাজটি ১৫০০টাকায় করা যায়, কিন্ত অনেকে ভাল কোম্পানীর এসএসএল সার্টিফিকেট ডোমেইন নামের সাথে যুক্ত করতে কমপক্ষে ৫০০টাকা নেন।সে কারণে খরচ ২হাজার দেখানো হয়েছে।তাহলে ডোমেইন,হোস্টিং,থিম ও এসএসএল এক সাথে বুঝে নেবেন।
এসএসএল কী?
এক কথায় বলি, এসএসএল হলো এমন একটি সার্টিফিকেট যেটি আপনার ওয়েবসাইটের সাথে সংযুক্ত থাকলে যে কোন ভিজিটর নিরাপদে ভিজিট করতে পারবেন,সাইট সহজে এক ক্লিকে খুলবে এবং সাইট থেকে কোন হ্যাকার কোন তথ্য সহজে চুরি করতে পারবে না।সাইটও নিরাপদে থাকবে অনেকটা। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যেসব ওয়েবসাইটে এসএসএল সার্টিফিকেট রয়েছে সেসব ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস বা URL এর শুরুতে https:// থাকে আর যে সব সাইটে URL এর শুরুতে http:// দেখবেন সে সব সাইটে SSL Certificate দেয়া নেই বুঝতে হবে। এই সার্টিফিকেট দেয়া না থাকলে অনেক সময় ব্রাউজার সাইট ভিজিট নিরাপদ নয় বলে সাইট খুলতে দেয় না।ব্লগ সাজানোর সময় অবশ্যই খেযাল পাঠকের কথা।সে জন্য ব্লগে মন্তব্য দেয়ার সুযোগ থাকতে হবে। এতে পাঠকের সাথে আপনার সুসম্পর্ক তৈরি হবে। পাঠক বার বার ফিরে আসবে। দুয়েকজন হয়তো নেতিবাচক লিখবে। তাতে মন খারাপ করলে চলবে না। মনে রাখবেন সেও একজন ভিজিটর। পোস্ট লেখার আগেই কত সাইজের ছবি আপনার ব্লগে দেবেন তা ব্লগ যিনি তৈরি করে দেবেন তার কাছ থেকে জেনে নেবেন।
আপনি যদি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে একটি জনপ্রিয় ব্লগ বানাতে ইচ্ছুক হন তাহলে আমার এ লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন,যদি নতুন ব্লগার হোন জানবেন অনেক কিছুই শুধু ভাল মানের ব্লগ লেখার নিয়ম খুঁজছেন তাহলে পড়ুন :
ভাইরাল আর্টিকেল কিভাবে লিখতে অনলাইনে ভাইরাল পোস্ট লিখতে যে ৩৬টি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত
পেশা হিসেবে ব্লগিং :
উন্নত বিশ্বের অনেক ব্লগার ব্লগ মনেটাইজ করে অবসর সময়ের আয়ের উৎসব হিসেবে এটিকে চিন্তা করেন। লেখালেখির যোগ্যতা যে একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস হতে পারে তা আমাদের দেশের অনেকে জানেন না। জানলেও বিশ্বাস করতে চান না। আপনি যদি ব্লগিংকে পেশা হিসেবে নেন নিজের লেখার যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ব্লগিং করে যান। প্রথমদিকের আপনার আয়গুলোকে ব্লগ মনেটাইজ করতে যা যা লাগে তার জন্য খরচ করুন। এক সময় এ ব্লগ আপনি ঘুমে থাকলেও আপনাকে অনলাইন ইনকাম দিতে থাকবে।জীবনের শেষ সময় তথা অবসর সময়ে ব্লগ থেকে টাকা আয় হবে।
ব্লগ লেখার নিয়ম :
বর্তমান অনলাইনের যুগে বাংলা ভাষায় ব্লগ তৈরি, ব্লগিং কেবল শখের বিষয় নয়,লেখার নিয়ম জানলে ব্লগ থেকে টাকা আয় হবে। তবে সফল ব্লগ বানানো চারটি খানি কথা নয়, এটা সবসময় মাথায় রাখবেন।একটি মানসম্মত ব্লগ তৈরি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চাইলে আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। মেধা খাটাতে হবে। প্রচুর নেট ঘাটাঘাটি করতে হবে।ব্লগ লেখার নিয়মগুলো নিজের আয়ত্বে নিতে হবে।
কিভাবে ব্লগ সাইট বানাবো
ব্লগ লেখার আগে ব্লগের নাম, মূল কী ওয়ার্ড কি, তা ঠিক করতে হবে।কোন কী ওয়ার্ড ও কিন নিস(বিষয়) ধরে আপনি আগাবেন সেটাকে ফলো করে লেখা বানাতে হবে।নিজের মতামত,উপদেশ,পরামর্শ অন্যদের কাছে প্রদর্শন করার বিশাল অনলাইন প্লাটফর্ম হচ্ছে ব্লগ লেখা বা পোস্ট। আপনি চাইলে প্রডাক্ট রিভিউ লিখে লিখে ও একটি ব্লগ চালাতে পারেন।
দৈনন্দিন মানুষের খাদ্য,অপকারিতা ও উপকারিতা,পুষ্টি ও অপুষ্টি,রেসিপি,পোশাক পরিচ্ছেদ,সাজগোজ, মেকআপ,চাকরি, লেখাপড়া,সমাজ-বসতি,খেলাধুলা, সিনেমা, নাটক, বিশ্বের নানা সফটওয়্যার,মোবাইল ফোন,টেক দুনিয়া,ভ্রমণ, ধর্মীয় ষিয় নিয়ে ব্লগ লিখে জনপ্রিয় করতে পারেন ব্লগ সাইট।তাছাড়া শুধু প্রতিদিন বা সপ্তাহে ছবি, ভিডিও দিয়েও ব্লগ বানানো যায়।
আয় করতে ব্লগ পোস্ট করার নিয়ম
০১. নিজের মনের মত করে যা খুশি লিখতে পারেন।লেখালেখির দক্ষতা থাকলে অন্যজনের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে আপনার ব্লগে লিখে আয় করতে পারেন।
০২. ‘কিভাবে’- পরামর্শ ও কৌশল দিয়ে প্রতিদিন পোস্ট দিন। শীতকালে বা গরমের দিনে কিভাবে সুস্থ থাকবেন, শীতের দিনে আপনার শিশুর যত্ন নেবেন যেভাবে,অতিরিক্ত গরম পড়লে আপনার খাদ্য তালিকায় যা রাখা জরুরি ইত্যাদি। শীতে যে সব সবজি খাবেন না !এভাবে নানা পরামর্শ ও কৌশল পাঠকের কাছে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করবেন। দেখবেন আপনার লেখার শেয়ার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।
০৩. রান্নার রেসিপি: আপনার ব্লগ যদি রেসিপি সংক্রান্ত হয় তাহলে, প্রতিদিন মজান মজার খাবারের নতুন নতুন রেসিপি দিয়ে পোস্ট দিতে পারেন, সেই সাথে ছবি দিতেও ভুলবেন না। দেখবেন নতুন রেসিপি আপনার ব্লগকে দ্রুত পাঠক প্রিয়তা দেবে।
০৪. মোবাইল ফোন রিভিউ: প্রতিদিন নতুন নতুন মোবাইল ফোন বাজারে আসছে।এসব ফোনের নানা সুবিধা ও অসুবিধা, মূল্য, ফোনের ক্যাপাসিটি ও অন্যান্য তথ্য তুলে ধরে আপনি ব্লগ লিখতে পারেন। মানুষ ফোন কেনার আগে সুবিধা অসুবিধা জানতে চেয়ে ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে। এখানে আপনি কোন ফোন কোম্পানীর কোন একটা মডেল নিয়েও বিশেষ রিপোর্ট পোস্ট দিতে পারেন। এতে কোম্পানী ও আপনি দুজনেই লাভবান হবেন।
০৫. প্রযুক্তি তথ্য : বিদেশের বিভিন্ন ইংরেজি পত্রিকা ম্যাগাজিন পড়লে আপনি জানতে পারবেন
নানা রকমের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের তথ্য। এমন অনেক ডিভাইস বা পণ্য আছে যে গুলো আমাদের অপরিচিত। ব্যবহার জানি না। কিন্ত হাতের কাছে পেলে কাজের জন্য খুব সুবিধা হবে। এসকল গ্যাজেট বা পণ্য কেনার আগে ক্রেতারা এগুলো সম্পর্কে জানতে চান। আজকাল অনলাইনের বদৌলতে এ সব কেনা খুব সহজ। অনলাইনে অর্ডার দিলেই দেশে পণ্য চলে আসে।ভিসা কার্ড দিয়ে পেমেন্টও করা যায়। নানা গ্যাজেট বা পণ্য সম্পর্কে রিভিউ করে পোস্ট লিখতে পারেন।কেউ আপনার রিভিউ পড়ে কেউ যদি কোন পণ্য করে সেখান হতে আপনি একটি কমিশনও পেতে পারেন।
০৬. ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগ: দেশ বিদেশে আপনি বা আপনার বন্ধুরা প্রায়শ ভ্রমণ করে থাকেন। তাদের কাছ থেকে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শুনে এবং ছবি কালেকশান করে ভ্রমণ বিষয় পোস্ট লিখতে পারেন। কোথায় যাবেন, কোথায় যাবেন না, কিভাবে গেলে কম খরচ, নিরাপদে থাকতে পারবেন সে সব থাকবে আপনার লেখায়।
ব্লগ তৈরি করে ব্লগিং শুরু করুন লেখার বিষয়ের অভাব হবে না। শুধু নিয়মকানুন মেলে ব্লগিং করলে অচিরেই আপনি সফল ব্লগারের স্বীকৃতি পাবেন। তখন অনলাইন ইনকামও যুতসই হবে।
উপরের আলোচনা হতে আপনি নিশ্চয়ই নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে গেছেন।
ক)কিভাবে ব্লগার হওয়া যায়? খ) কিভাবে ব্লগিং শুরু করবো গ)ব্লগিং টিউটোরিয়াল
ঘ) ব্লগিং শিখতে কি কি জানতে হয় ঙ) ব্লগিং সাইট কী
বন্ধুরা এবার আসা যাক
ব্লগ থেকে টাকা আয় প্রসঙ্গে:
ব্লগ থেকে আয় করতে চাইলে সর্বপ্রথমে আপনাকে যে কাজটা করতে হবে সেটা হলো, যারা ব্লগিংকে একমাত্র পেশা হিসেবে নিয়েছে তাদের ব্লগ ভিজিট করা। খুটিনাটি দেখা। তারা কিভাবে আয়ের পথ বের করেছে সেটা চিহ্নিত করা।তাদের আয়ের উৎসক কি কি?
ব্লগ লিখে আয় করার সহজ উপায় সম্পর্কে আরো জানতে আমার নিচের আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন: