জুম অ্যাপ( Zoom Meeting App) হল ওয়েব মিটিং সফ্টওয়্যার। অনলাইনে মিটিং করার জনপ্রিয় অ্যাপ। কম্পিউটার,আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইনস্ট্রল করে সুন্দর ভার্চুয়াল মিটিং করা যায়। বিভিন্ন স্থানে থাকা স্বজনদের পারিবারিক মিটিং বা সভা, আলোচনা, স্কুল কলেজের ক্লাশ, সমিতির সদস্যদের সভা,সরকারি বেসরকারি মতবিনিময় করার দারুন এক অ্যাপ এর নাম জুম অ্যাপ।
সম্মানিত পাঠকদের অনুরোধে জুমএপ,জুম ভিডিও কমিউনিকেশন্স,ওয়েব মিটিং সফটওয়্যার জুম ব্যবহারের নিয়ম এবং ‘জুম ক্লাউড মিটিংস’ দিয়ে কিভাবে মিটিং করবেন তা নিয়ে আজকের আলোচনা।
জুম অ্যাপ কে আবিষ্কার করেন?
চীনা-মার্কিন ব্যবসায়ি এরিক ইউয়ান এর মালিকানাধীন Zoom Video Communications, Inc. নামে একটি কোম্পানি জুম অ্যাপের মালিক। ২০১১ সাল থেকে টানা দুবছর ধরে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ২০১৩ সালে Zoom Meeting App টি আনুষ্টানিকভাবে বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
জুম অ্যাপ(Zoom App) কিভাবে ডাউন লোড করব, অ্যাকাউন্ট খুলবো :
অ্যাপস স্টোর থেকে আপনি ‘জুম ক্লাউড মিটিংস’ নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন।অন্য কোন জুম অ্যাপ নেবেন না। অ্যাপটি আপডেট করে নিন। সেই সাথে ফোন নিরাপদ রাখার অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিয়মিত আপডেট রাখতে হবে।
প্রিয় জুম অ্যাপটি ইনস্টল করুন।পরে একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন। গুগল কিংবা ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জুম অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। খুব কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন।
জুম অ্যাপ ব্যবহারের নিয়ম(Zoom Video Communications Company):
অ্যাকাউন্ট খুলে লগইন করুন। দেখতে পাবেন ৪টি ট্যাব।১) নিউ মিটিং ২) জয়েন ৩) শিডিউল ও ৪) শেয়ার স্ক্রিন।
১) নিউ মিটিং বাটনে ক্লিক করে আপনি মিটিং শুরু করতে পারবেন, এই অপশন থেকে জুম আইডি, ইমেইল অ্যাড্রেস বা মিটিংয়ের নাম ব্যবহার করে যে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে।হ্যকারদের কাছ থেকে বাঁচতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সাথে মিটিং আইডি বা লিঙ্ক শেয়ার বা প্রকাশ করবেন না। ভিডিও অন অপশনে ক্লিক করলে মিটিং শুরু হওয়ার সাথে সাথে আপনার মোবাইল ফোনের সামনের ক্যামেরা ওয়েবক্যাম হিসেবে কাজ শুরু করবে। User Personal Meeing ID অপশনটি অন করা থাকলে অন্যান্য অংশগ্রহণকারী আপনার মিটিং আইডিটি দেখতে পাবেন।
২) জয়েন বাটনে ক্লিক করে অন্য কারও আমন্ত্রণে কোনও মিটিংয়ে যোগ দেয়া যাবে, এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে মিটিং আইডি ও পাসওয়ার্ড। আপনি ইচ্ছে করলে জয়েন মিটিং বাটনে ক্লিক করার পূর্বে Don’t Connect to Audio এবং Turn Off My Video নামের অপশন ২টি প্রয়োজনমাফিক অন/অফ করে নিতে পারবেন। Don’t Connect to Audio এবং Turn Off My Video অপশন ২টি অন করা থাকলে মিটিং এ অংশগ্রহণ করলেও কেউ আপনাকে দেখতে বা শুনতে পাবে না।
৩) মিটিংয়ের শিডিউলের জন্য শিডিউল অপশন ব্যবহার করবেন
৪) স্ক্রিন অপশন: সফল মিটিং শেষ হলে নিচের ডান কোণে থাকা ‘END Meeting’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
ভার্চুয়াল মিটিং অ্যাপ্লিকেশন জুম ক্লাউড মিটিং অ্যাপ ব্যবহার করার সময় প্রতিটি সভা বা ক্লাশের জন্য পৃথক মিটিং আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারলে খুব ভাল হয়। তাছাড়া মিটিংয়ে আয়োজকের (HOST) পূর্বে যেন অংশগ্রহণকারীরা যোগদান করতে না পারে সে জন্য “join before host ” অপশনটি নিষ্ক্রিয় (Disable) করে রাখুন।সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাজে জন্য জুম এর বিজনেস কিংবা এন্টারপ্রাইজ ভার্সন ব্যবহার করা শ্রেয় । এই ভার্সনে সিঙ্গেল সাইন অন সহ আরো বেশ কিছু সিকিউরিটি ফিচার যুক্ত করা আছে যা আপনার ভার্চুয়াল সভাকেনিরাপদ করতে পারে। কারণ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ যদি কোন ম্যালিসিয়াস ফাইল শেয়ার করে দিলে আপনি বিপদে পড়ে যাবেন। সিঙ্গাপুরে করোনাকালে একটি স্কুলের ক্লাশ চলাকালে ত্রি এক্স (অশ্লীল ভিডিও) প্রদর্শিত হয়েছিল।
জুম অ্যাপ এর নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি সারা বিশ্বে হৈ চৈ শুরু হয়েছে। মানুষ জুম এর বিকল্প খোজা শুরু করেন। সেরা বিকল্পগুলোতে রয়েছে অস্থায়ী এক্সেস, লিমিটেড ফিচার।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিয়ে সীমাবদ্ধ থাকছে এ সব অ্যাপ।
যেমন ফেসবুক,হোয়াটস অ্যাপ, এবং ফেসটাইম ভিডিও চ্যাট, কথা বলার সুযোগ দেয়।তবে শর্তহলো সবাইকে অনলাইনে থাকতে হবে, ওই সব সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
পরে সময় করে দেখে নিন: জুম অ্যাপ খোলার নিয়ম,জুম ব্যবহারের নিয়ম
Video Conferencing Apps List
জুম অ্যাপ এর বিকল্প হিসেবে বিশ্বব্যাপী যে সব অ্যাপ ভিডিও কনফারেন্সিং কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তার একটি বাছাইকৃত তালিকা নিচে তুলে ধরা হল:
০১.(Skype Meet Now)
একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতে সুযোগ করে দেয় স্কাইপি।৩০দিন পর্যন্ত ভিডিও রেকর্ড রাখার সুযোগ রয়েছে এই অ্যাপে।
একসময়কার জনপ্রিয় এই সেবাটি এখন অনেকটা ম্রিয়মান। জুম ক্লাউড মিটিং সফটওয়্যার,জুম এপ যে বেসিক ফ্রি সেবা সাধারণ মানুষসহ সব শ্রেণীর মানুষ কে দিচ্ছে তার কোন প্রকৃত বিকল্প হয় না।
০২. সিসকো উইবেক্স(CISCO Webex):
উইবেক্স একটি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ যেটি ১৯৯০সাল থেকে সেবা দিয়ে আসছে। এই অ্যাপটিতে ৫০-১০০জন অংশগ্রহণ করতে পারেন।৪০মিনিট পর্যন্ত ফ্রি মিটিং করার সুবিধা রয়েছে। সিসকো উইবেক্স ৩০বছর ধরে ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা দিলেও জনপ্রিযতায় জুম ক্লাউড মিটিং অ্যাপ এর ধারের কাছে যেতে পারছে না।
০৩. গুগল মিট (Google Meet, Google Class Room)
এটা গুগলের একটি পেইড সার্ভিস। জি সুইট থেকে পাওয়া যায়।যাদের জিমেইল রয়েছে তারাই এ সুবিধা ভোগ করতে পারেন।কলিগ, ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি মেম্বারদের জন্য ভিডিও কনফারেন্সিং সুবিধা রয়েছে।অংশগ্রহণকারী সবারই জিমেইল থাকতে হবে। ক্লিক অন দি জয়েন এ মিটিং। মিটিং নাম দিতে হবে। এখানে সিকিউরিটি ফিচার রয়েছে। ইচ্ছে করলে সবাই মিটিংয়ে অংশ নিতে পারবে না।
০৪.স্টারলিপ(Star Leaf)
করোনাকালে এই অ্যাপসটি বেসিক ভিডিও ও মেসেজিং সেবা ফ্রি দিচ্ছে।মূলত: এই অ্যাপসটি বড় বড় কোম্পানীকে টাকার বিনিময়ে ভিডিও কনফারেন্সিং ও মেসেজিং সুবিধা দিয়ে থাকে।ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন সবোর্চ্চ বিশজন অংশগ্রহণকারী এবং সময় ফিক্সড থাকে ৪৬মিনিট।
০৫. জিৎসি মিট(Jitsi Meet)
এই অ্যাপসটির নাম হয়তো আপনি আগে শুনেন নি।তবে এটি একটি ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম যেটি সহজে অনলাইনে পেয়ে যাবেন। ডাউনলোড করেই ক্লিক করতে পারেন ‘গো’তে। আপনার যদি অধিক ফিচারের দরকার হয় তা হলে আপনি জিৎসি ভিডিও ব্রিজ তৈরি করে নিতে পারেন। যারা খুব জনপ্রিয় সাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করতে চান না,কিছুটা আলাদাভাবে কিছু করতে চান তাদের জন্য জিৎসি মিট বেটার। তবে জুম এপ এর সমান কাতারে দাঁড়াতে জিৎসি মিটকে আরো উদার হয়ে ফ্রি সার্ভিস দিতে হবে।
অনাকাঙ্কিত অংশগ্রহণকারীদের দূরে রাখার জন্য এখানে রয়েছে কিক আউট বাটন।সবোর্চ্চ ৭৫জন একসাথে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে অংশ নিতে পারেন।
হয়ারবাই(Whereby.com)
উপরের আলোচনাকৃত ফ্রি কনফারেন্সিং সেবা দেয়া অ্যাপসগুলোর মধ্যে হয়ারবাই(Whereby.com)
একটু ব্যতিক্রম। এটি একক রুমে চারজনের ভিডিও কনফারেন্সিং সুবিধা দিয়ে থাকে।বেশি অংশগ্রহণকারীর চিন্তা থাকলে আপনাকে হয়ারবাই এর প্রো ভার্সন (পেইড সেবা) নিতে হবে। এ জন্য প্রতিমাসে গুনতে হবে ১০ মার্কিন ডলার। তিনটি মিটিং রুমে এক সাথে ১২জন ভিডিও কনফারেন্সিং এ কথা বলতে পারবেন। স্ত্রিণ শেয়ারের সুবিধা রয়েছে এই অ্যাপ এ।
স্ল্যাক( Slack):
স্ল্যাক প্রধানত প্রতিষ্টিত হয়েছে মূলত টেক্স চ্যাট এর জন্য। তারপরেও স্ল্যাক ভয়েস ও ভিডিও কল করার সুবিধা দিয়ে থাকে। আপনি যদি এটি ফ্রি সার্ভিস ব্যবহার করেন তাহলে আপনি শুধু একজনকে কল করতে পারবেন। আপনি যদি বড় সংখ্যার অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে মিটিং করতে চান তাহলে এটির পেইড সার্ভিস ব্যবহার করতে হবে।
মাইক্রোসফট টিমস( Microsoft Teams):
মাইক্রোসফট টিমস অবশ্যই মাইক্রোসফট এর একটি ইকোসিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন।এটি একটি ভাল আইডিয়া বলতে হবে। কোম্পানীর যোগাযোগ ব্যয় কমাতে এটি খুব বেশি কার্যকর।মাইক্রোসফট টিমস এখন ফ্রি ভার্সনে ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধা দিচ্ছে এখন। যখন আপনি সাইনআপ করবেন তখন আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে , আপনি টিমকে কিভাবে ব্যবহার করতে চান?
আপনি যদি ফর ফ্যামিলি এন্ড ফ্রেন্ডস অপশনটি পিক করেন তাহলে আপনাকে সোজা স্কাইপিতে নিয়ে যাবে। কারণ এটি অফিস ইউজ অনলি সাপোর্ট করে থাকে।
আরো কিছু ভিডিও কনফারেন্সিং সুবিধা প্রদানকারী জুম অ্যাপ এর বিকল্প অ্যাপ এর নাম আপনার সামনে তুলে দিতে পারি। এগুলোর বেশিরভাগের নেই বেসিক ফ্রি সার্ভিস। তবে কোনটি ভিডিও কনফারেন্সিং এ ৫০জন অংশগ্রহণকারীর সুযোগ দিয়ে থাকে।
ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ
রিমোট এইচকিউ(Remote HQ),ব্লুজিনস(Blue Jeans), হাই ফাইভ(Highfive) এবং টকি(Talky).
ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য জুম অ্যাপ এখনো বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয়। উপরের দীর্ঘ তুলনামূলক আলোচনায় দেখা গেছে, জুম ভিডিও কমিউনিকেশন্স সবার সেরা।Zoom app দিয়ে ক্লাশ নেয়া, ভিডিও কনফারেন্সিং পরিচালনা, ওয়েব মিটিং সফটওয়্যার জুম অ্যাপ ব্যবহার, জুম অ্যাপ ডাউনলোড অনেক অনেক সহজ।
জুম অ্যাপএর নিরাপত্তা জোরদার :
জুম অ্যাপ কোম্পানী সব সময় অ্যাপটির করপোরেট ব্যবহারের ওপর জোর দেন। যদিও তাদের ব্যক্তি পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সিং(Zoom Meeting) এর সুবিধা বহুল সমাদৃত।জুম কখনও এই করোনাকালের মত দু:সময়ে আকস্মিক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায় না।সাম্প্রতিক বিভিন্ন অভিযোগ ও সমস্যাদি দ্রুত নিস্পত্তি করে জুম কর্তৃপক্ষ অ্যাপটির নিরাপত্তা জোরদার করেছে।ফলে জুম এর সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়া নেতিবাচক ধারণা কম সময়ে গ্রাহকরা ভুলে যান।
জুম অ্যাপ ফ্রি ভার্সনে ১০০জন ব্যবহারকারীর অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে থাকে।তবে সময় বেধে দেয় ৪০ মিনিট। ২-১০০জন পর্যন্ত এই সময়টি ফ্রি ভিডিও কনফারেন্সিং মিটিং করার সুবিধা পান। বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমনে তছনছ হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা ও জীবনপ্রনালী। খাদ্য অভ্যাস। লাখো লাখো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছোট ছোট চাকরীজীবী হারিয়েছেন ব্যবসা ও পেশা।করোনাকালে ২০২০ খ্রীস্টাব্দের শুরুতে দেশে দেশে যখন লকডাউন শুরু হয়, তখন অনলাইন ইনকাম ও অনলাইনে আয় এর জন্য বেকার শিক্ষিত নারী পুরুষ বিশেষ করে তরুণ, যুবক যুবতী অনেক চেষ্টা আরম্ভ করে। স্বজন বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশিদের কাছে লকডাউনে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং শেখার জন্য উঠে পড়ে লাগে। সবার লক্ষ আয়ের বিকল্প পথ সন্ধান।
বিশ্বব্যাপী যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছে, তাদের নানা ডিসকাশন গ্রুপের জন্য জুম কর্তৃপক্ষের উচিত ভিডিও কনফারেন্সিং(Zoom Meeting) বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা দেয়া।